Tuesday 8 June 2010

বেদনাবিহীন প্রসব। আপনারা ধন্যবাদার্হ্য

কতজন ঝুলছে সেটা বড় কথা না। কথা হল 'দৃষ্টান্ত' স্থাপন করার পথে আরেকপ্রস্থ অগ্রসর তো হওয়া গেল। এই বা কম কিসে। ছেলে পিলে বড় বাড় বেড়ে যাচ্ছিল। বল্গাহীন হয়ে উচ্ছিন্নে দিচ্ছিল খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের সুললিত ঐতিহ্য। কাহাতক আর এইসব নচ্ছামি সহ্য হয়। প্যান্টের পকেটে হাত ঢুকিয়ে অনেক সহ্য করেছেন তারা। বেয়াদপ ছেলেপেলে 'পাছার পাচড়া চুলকিয়ে বলা এইতো আছি বেশ' গানের সুর, তাল, লয় কেটে দিচ্ছিল। দৃষ্টান্ত দরকার। দৃষ্টান্ত দরকার।

শাহনেওয়াজ নামক শাহ্‌র উপরে বেয়াদপ ছেলেপিলেদের অসদাচরন তো রীতিমত জাতীয় মানসন্মানের প্রশ্ন। হতে পারে শাহ ভার্সিটির একটা ছেলেকে দলীয় কোঠায় দু-চারটা চড় থাপ্পর মেরেছে তার পাওনা টাকা চাইবার অপরাধে। এইকারনে বেয়াদপ ছেলেপেলে তাকে আটকে রাখবে? তাকে মাফ চাইতে বলার সাহস দেখাবে? মহামুল্যবান বেলজিয়ান কাচের তৈরী গ্লাস ভাংচুর করবে? অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ছেলেরা খুন করে, একে অন্যকে চাপাতি দিয়ে কোপায়, আগুন লাগিয়ে দেয় বইপত্রে আর সেগুন কাঠের ফার্নিচারে কিন্তু খুলনা বিশ্ব: এর বেয়াদপ ছেলেপেলে বলে কিনা মাফ চাও, ভাংচুর করে, আটকে রাখে শাহ্‌ কে। লজ্জ্বায় মাথা কাটা যাচ্ছে প্রশাসন বাহাদুরের। না প্যান্ট থেকে মুঠ করা হাত বের করা দরকার। দৃষ্টান্ত দরকার। দৃষ্টান্ত দরকার।

প্রশাসন বাহাদু্রের নির্দেশে ভার্সিটি খালি হয়ে গেলো মুহুর্তেই। আদালত বসলো। আদালতে বেয়াদপ ছেলেপেলে আসে, তাদেরকে ভার্সিটির পক্ষ থেকে চরম আথিতেয়তার সাথে বসতে দেয়া হয়, চা-পানির আথিত্যতাও মনে হয় করা হয়। হাজার হলেও এরাই তো দৃষ্টান্ত স্থাপনের জন্য দুদিন পরে বলির পাঠা হবে। কেচো খুড়তে সাপ বেরোয়, তদন্ত কমিটি বিডিআর হত্যাযজ্ঞে তদন্তে সেভাবে পৌন:পৌনিক ভাবে সময় বাড়িয়ে নিয়েছিল, সেভাবেই তারাও সাপের খোজে সময় বাড়িয়ে নিল। খুন হওয়া ভার্সিটি, কলেজগুলো ইতিমধ্যো খুলে দিয়েছে, কিন্তু আমাদের তদন্ত কমিটির দন্ড যে দাঁড়িয়ে গেছে ততক্ষনে, যেভাবেই হোক সাপ বের করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে হবে।

অবশেষে প্রসবিত হল সেই রিপোর্ট কোন বেদনা ছাড়াই। তদন্ত কমিটি এখন তাদের দীর্ঘ পরিশ্রমের বহুল কাঙ্খিত দৃষ্টান্ত স্থাপনে সক্ষম হয়েছেন। ৪ টা বেয়াদপ ছেলেকে চিরকালীন বহিস্কার করতে পেরেছে, ৭ টাকে ২ বছরের জন্য সাথে স্যারদের পানবিড়ি খাবার জন্য ১৫০০০ টাকা, ১৪ টাকে ১ বছরের জন্য সাথে স্যারদের পানবিড়ি খাবার জন্য ১৫০০০ টাকা আর ৯ টাকে শুধু ১৫০০০ টাকা দিয়ে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হোল, পাড়া জুড়োল। যেসব ভার্সিটিতে খুন খারাবি পানবিড়ি খাবার মত ব্যাপার তারা যেটা করতে পারেনি আপনারা সেটি করেছেন। আপনাদের উপর অনেক কায়িক শ্রম গেছে নিশ্চয়ই। ৩৪ টা ঘাড়ত্যাড়া বেয়াদপকে আপনারা দক্ষতার সাথে সাইয করতে পেরেছেন। এতো পরিশ্রমের পরে নিশ্চয়ই আপনাদের ভাদ্র লেবাস একটু আলুথালু হয়ে পরেছে। নিশ্চয়ই হাপাচ্ছেন। বিশ্রাম নিন জনাব। বাকিটা দেখার লোক আছে। বেয়াদবি করার শাস্তির সুস্পষ্ট দৃষ্টান্ত স্থাপিত হোল। আপনারা ধন্যবাদার্হ্য। শতকোটি সালাম এবং প্রনাম আপনাদের পদজুগলের পাদদেশে। দেশের সর্বক্ষেত্রে আপনাদের অভাব অনুভব করছি। আপানারা প্রনামার্হ্য।

জনাব, ২৫ টি ছেলেকে আপনারা বহিস্কার করেছেন, ৪ টাকে কে তো চিরস্থায়ী বন্দোবস্তো করে দিয়েছেন। ৭ টাকেও প্রায় দিয়েছেন। শাহ্‌ কে অপমান করার অপরাধে, উনাকে আটকে রাখার অপরাধে, উনাকে মাফ চাইতে বলার অপরাধে, বেলজিয়ান গ্লাস ভাঙ্গার অপরাধে। আপনারা নাকি এদের কে সন্তান সমতুল্য দেখতেন। কথায় কথায় চতুর্দিকে ঘিনঘিনে ছেপ ছিটায়ে জানান দেন তোমরা আমার সন্তান। তো সন্তানদের এইভাবে বলির পাঠা বানাতে গিয়ে সেই ছেপ গিলতে হয়েছিল? দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে গিয়ে আপনারা আপনাদের মাজা, মেরুদন্ড যে জেলী করে ফেলেছেন সেটা কি টের পেয়েছেন? এই রকম জেলী মাজা নিয়ে ৩৪ টাকে সাইজ করতে পেরেছেন। আপানারা ধন্যবাদার্হ্য। আপনারা প্রনামার্য্য।কিন্তু এতোটা তো না করলেও পারতেন। আপনাদের যেমন জেলী মাজা তেমনি আপনাদের সন্তানরাও তো ভার্সিটিতে ভর্তি হবার সময়ে মেরুদন্ডটাকে বন্ধক রাখে আপনাদের কাছে। নিবীর্য, ঢোড়া সাপ তো তাদের আগেই বানিয়ে দেন, তারপরেও আপনারা ভাদ্র মানুষ, সন্তানদের সাথে এই গুনাহের কাজটি না করলেই তো পারতেন।

স্যার, ৩৪ টা ছেলে শুধুমাত্র ছেলে বা ছাত্র নয়। তারা ৩৪ টি ঘরের স্বপ্ন। বাবার স্বপ্ন, মায়ের স্বপ্ন, ভাই-বোনের স্বপ্ন। আপনাদের গোল্ডফিস মেমোরিতে কি কুলায় স্বপ্ন মানে কি? জীবনে আপনারা তদন্ত কমিটিতে দণ্ড খাড়া করে বসে থাকবেন সেই স্বপ্নই তো আপনাদের কোনকালে ছিলনা। আপনারা স্বপ্নের মানে কি বুজবেন। স্বপ্নভঙ্গের বেদনাও বা আপনারা কি বুজবেন। আপনাদের শুধু যে শরীর না, অনুভুতিটাও গন্ডারের চামড়ায় মুড়িত। আপনারা কুয়ার ব্যাং, পুকুরকে ভাবেন সাগর। ৩৪ টি স্বপ্নকে গলাচিপে মারতে আপনাদের অনুভুতিতে বিন্দুমাত্র রক্তক্ষরন হবার কথা না। ওটাও যে বন্ধক রেখেছেন তদন্ত দণ্ড দাড়া হবার পুর্বে।

এক মাঘে কি শীত যায়? উড়ে যাবার পড়েও তো পঙ্খির ছায়া পড়ে থাকে। পানি গড়ানোর পরেও তো দাগ দেখি। কত বড় বড় কুতুব ঐসব বেয়াদপদের স্বপ্নভঙ্গের কারনে আজ চেয়ার ছারা আপনারা সেই ইতিহাস এতো সহযে ভুলে গেলেন? আপনাদের চোখের সামনেই তো এগুলো ঘটেছিল। ইতিহাসটা একটু মনে করে দেখেন স্যার। তখন হয়তো আরেকবার বলবো আপনারা ধন্যবাদার্হ্য। আপনারা প্রনামার্য্য। বর্গীয় গালীগুলো তখন হয়ত মুখের আগায় এলেও আটকাতে পারবো।

Monday 7 June 2010

আমার দেশটা কি সত্যিই বসবাসের অযোগ্য?

কপালের ঠেলায় পরে, উপরয়ালার ইচ্ছায় ২০০৮ সালে একটা স্কলারশীপ নিয়ে বেলজিয়ামে পড়তে আসলাম। আর মাস তিনেক পরে ফেরত যাবার কথা। অন্নদাতারা বলে দিয়েছে উনারা আর পয়সাপাতি দিতে পারবেনা। যাইহোক আমি গরীব দেশের অপুষ্টিতে ভোগা মানুষ, এই দেশে এসে দুটো ভালো মন্দ খেয়েছি, গালে আলগা চর্বি জমিয়েছি, লিকলিকে দেহের হাড্ডির সাথে কিছু মাংস উকিঝুকি দিচ্ছে। সবই উনাদের দান। আমি বড়ই কৃতজ্ঞ, আহলাদিত এবং পুলকিত।

সাথে উপজাত হিসাবে যোগ হয়েছে লোকজনের বাড়তি খাতির। বিদেশে কেউ থাকলেই লোকজন অকারনেই একটু বাড়তি খাতির করে। আশা করছি ৩ মাস পরে খাতিরের মাত্রা রিখটার স্কেলে দশমিকের ঘরে নেমে আসবে। খাতিরকারীগন নতুন কোন প্রবাসীর সাথে খাতির জমাবে। খাতিরের কোন অভাব আমাদের নেই। দিল ভর্তি খাতির, উপচিয়ে পড়ছে প্রতিদিন। রেগুলার উদারহস্তে বিলিয়েও খাতিরভান্ডার খালি করতে পারছিনা। বড়ই মর্মান্তিক।

খাতিরের মাধ্যমটা হলো আবার ফেসবুক নামক একটা যন্ত্রনা। এই ফেসবুক আর খাতিরের যুগলবন্দিতে আমি ২০০৯ সালের প্রথম বার্ষিক পরীক্ষাতে ৩ টা বিষয়ে ঢেলে দিয়েছিলাম। আবার পরীক্ষাগুলা দিয়ে ২য় বর্ষে পদার্পন করলাম, আর খাতিরের সাথে এখন যোগ হচ্ছে উপদেশ। আমার সার্বিক মংগলার্থে উপদেশ। সেগুলো আবার পয়দা হয় উতকৃস্ট সব মস্তিস্ক থেকে যাদের যোগ্যতা নিয়ে সন্ধেহ প্রকাশ করার দ:সাহস আমি কণকালেই দেখাতে পারিনা। এইসব উপদেশসমুহের [অনেক ক্ষেত্রে আবার একবচন] মধ্যো একটি কথাই সারাংশ। কেনো আসবে দেশে ফিরে? বিদেশে থেকে যাও। বাংলাদেশের কোন ভবিষ্যত নাই, পিএইচডি করার ধান্ধা [লেখাপড়া ইদানিং বড়মাপের ধান্ধা] করো ইত্যাদি এবং ইত্যাদি।

আমি অবাক হইনা, ইশ্বর এই ক্ষমতাটা কেনো আমাকে কম দিলেন তা নিয়ে আমার বিপুল আক্ষেপ। আমি বিব্রত হই, আমি কুন্ঠিত হই, আমি নিজের কাছে করজোড়ে মাফ চাই যেন এইসব কথা আমার স্মৃতিতে স্থায়ীভাবে গেড়ে না বসে। সবাইকে দিয়ে থুয়ে ছোট্ট একটা ভুখন্ড জগতশেঠরা আমাদের জন্য বরাদ্দ করেছে। সেই দেশ মাত্র ৪০০০ টাকায় আমাকে একটা ডিগ্রি এর ব্যবস্থা করে দিয়েছে। সেই দেশ আর আমার মায়ের মধ্যো কতটুকু পার্থক্য? অহরহ গাইতে শুনি [দেখি] 'দেশ আমার মা', 'জননী জন্মভুমি স্বর্গাদপী গরিয়সী'। সেই গাতকরাই দুই দিন পরে নসিহত দেয় অনাচারে দেশ উচ্ছিন্নে গেছে, বিক্রি হয়ে গেছে, থাকার পরিবেশ নাই। আমি আবার কুন্ঠিত হই। এই দেশই তো আমাকে আমার জীবনের ২৬ বছর খাইয়ে পড়িয়ে রেখেছে, মায়ের মতই দেখা শুনা করেছে প্রতিটি ক্ষনে। আবার যারা বলছে তাদেরও করেছে। তাহলে কি সেই মাকেই তারা বলছে বিক্রি হয়ে গেছে, আসিস না আর ফিরে মায়ের কাছে? আমি নির্বাক থাকি।

হয়তো বাংলাদেশ কে আমি কিছু দিতে পারবোনা। কিন্তু আমি প্রতিক্ষনে শুনি মা আমায় ডাকছে। যা উপেক্ষা করার সাহস আমার নেই। আমি ওই জরাগ্রস্থ মায়ের কাছেই যাবো, আমার মলুহার গ্রামে যাবো যা আমার কাছে বিশ্বের সবচেয়ে সুন্দর জায়গা। আর আজীবন করুনা করে যেতে চাই তাদের প্রতি যারা শুধুমাত্র নিজের পকেটেটি ই আগে দেখলো। ব্যাতিক্রম শুধু তারা যারা আরো লেখাপড়া করতে উতসাহ দিয়ে যাচ্ছেন অবিরত। কৃতজ্ঞতা।

Sunday 6 June 2010

সংযম সাধনার পরে ফিরে আসা ফেসবুক এবং অনুভুতির কান্না

আজ ফেসবুকে একটা ষ্ট্যাটাস দিয়েছিলাম 'সাতদিনের কঠোর সংযম সাধনার পরে ফিরে এলো ফেসবুক'। অকালকুস্মান্ড সরকার মাথাব্যাথা সারাতে গিয়ে মাথাটা কেটে ফেলেছিলো বন্ধ করে দিয়েছিল ফেসবুক [১]। অনেক দেন দরবার, কান্নাকাটির পরে বস্তুটা আবার সাতদিনের মাথায় খুলে দেয়া হল এবং সেই সাথে লোকজনের হুড়োহুড়ি শুরু হয়ে গেল। ভাল। অতীব ভাল সিদ্ধান্ত। সর্বক্ষেত্রেই সরকার বাহাদুর তার ব্যাপক বাহাদুরিত্ত্ব দেখিয়ে যাচ্ছে।

অবশ্যই ফেসবুক খেলে দেয়ার সিদ্ধান্ত এক বিশাল আনন্দ। ফেসবুকের প্রভাবটা এমনই ব্যাপক যে সবাই হাসফাস করছিলো আর নানা চিপা চাপা দিয়ে, প্রক্সি সার্ভার দিয়ে লগ-ইন করে দুধের স্বাদ ঘোলে মেটাচ্ছিল। কিন্তু বাহাদুর সরকার কবে বা কখন এটা খুলে দেবার এই আনন্দ উপলক্ষ্য এনে দিলো? যেদিন বাংলাদেশে সবচেয়ে মর্মান্তিক আগুন দুর্ঘটনার কারনে ১২০ জনের পোড়া লাশ দেখতে হলো তার দুদিন পরে, এবং এই উপলক্ষে বাহাদুর কর্তৃক এলানিত শোক দিবসে।

পোস্টের স্রোত আস্তে শুরু করল। লক্ষ্য করলাম সবাই অনেক আনন্দিত, উচ্ছসিত। আমিও [নিজেকে কেব্লা লাগছিল ফেসবুকের কানেকশন ছাড়া, দেশের সাথে যোগাযোগের সূতোটা অনেক চিকন হয়ে গিয়েছিল] সবার সাথে আনন্দ শেয়ার করলাম আমার ষ্ট্যাটাস দিয়ে। কিন্তু চোয়াল ঝোলা বিস্ময়ের সাথে খেয়াল করলাম মাত্র একদিন আগে ঘটে যাওয়া নির্মম ঘটনাটি নিয়ে কারো কোন ষ্ট্যাটাস ম্যাসেজ নেই, সবাই একে অপরের সাথে এদের মত কোলাকুলি করে ফেসবুক মোবারক জানাচ্ছে ভার্চুয়ালি [দু একজন ব্যাতিক্রম বাদে, কিন্তু মনে হচ্ছিল তারা বিলুপ্তপ্রায় প্রানীকুলের প্রতিনীধি]।

সরকার বাহাদুর কে ধন্যবাদ দিতেই হয় শোকের দিনে এমন আনন্দ উপলক্ষ্য এনে দেবার জন্য। আমরা নিজেরা নিজেদের পিঠ চাপরে দিতে পারি এই বলে আমরা আমাদের কোমল অনুভুতিগুলোকে কবরস্থ করার আয়োজন প্রায় সম্পন্ন করার কৃতিত্ত্বে। আমাদের তো আসলে এমন কোমল অনুভুতি থাকতে নেই। বর্ষা সমাগত। পানি-দুর্ঘটনায় ২০০/৪০০ অবিরাম মরতে থাকবে। তারপরে শুকনো মৌসুমে আগুন লাগতে থাকবে বস্তি থেকে শুরু করে বসুন্ধরাতে। এতো কোমলতা থাকলে বাংগালীর তো ৩৬৫ দিনই শোকাহত থাকতে হবে।

আমাদের সুখের অনুভুতি উপচিয়ে পড়েছিল ফেসবুক খুলে দেয়াতে। অবশ্যই দুক্ষের অনুভুতিও যেদিন আগুনে পুড়ে ১২০ জন মারা গেলো। কিন্তু দুই অনুভুতিকে যখন দাড়িপাল্লার দুইপাশে রাখি তখন দুক্ষের অনুভুতিটা ভরশুন্য হয়ে প্রায় উলম্ব অবস্থানে চলে যায়। সুখানুভুতির ভর আসলে অনেক বেশী।

Saturday 5 June 2010

নিজের ব্লগ- অনুভুতির ছিন্ন প্রকাশ

আজকে আমার এই ব্লগটা শুরু করলাম। আমি এখনো খুব নিশ্চিত না আসলে কি লিখব এখানে। নিজের একটা ব্লগ থাকা আর ডাইরি লেখার মধ্যো আসলে অনেক তফাত। ডাইরি আমাকে যে ব্যক্তিগততা দেয় ব্লগ কখোনই আমাকে সেটা দিবেনা। আর আনি যে খুব ডাইরি লিখি তাও না। তবে মাঝে সাঝে লিখি আর কি। খুব ব্যাক্তিগত অনুভুতিগুলোই সাধারনত লেখা হয়। এই বাক্যটি লেখার পরেই মনে হয় একটা রাস্তা দেখতে পাচ্ছি আসলে আমি কি লিখব এখানে। মাথার মধ্যো সব সময় সমসাময়িক ঘটনা কেন্দ্রিক যে ভাবনাগুলো কিলবিল করে সেগুলো ডাম্প করার জন্য ব্লগটা মনে হয় সবচেয়ে উপযুক্ত জায়গা হবে।

অনেক সীমাবদ্ধতা নিয়ে লিখতে হয়। শুধুমাত্র ফোনেটিক কিবোর্ডের উপর নির্ভর করে ব্লগ লেখা আর ডিংগী নিয়ে আটলান্টিক পাড়ি দেয়া সমান কথা। টায়প করতে গিয়ে অনেক ভুল হয়, সেগুলো ঠিক করতে গিয়ে মাথার মধ্যো থাকা ভাবনার সূতোটা মুহুর্তেই কর্পুর এ রুপ নিতে পারে। আমার জন্য এ খুব স্বাভাবিক ব্যাপার। শ্রুতিধর না হলেও মনে রাখতে পারতাম বেশ ভালোই। ইদানিং বেশ খাবি খাই স্মরনশক্তিকে নিয়ে। এই যে আরো কি কি যেন সীমাবদ্ধতা ছিল সব গিলে বসে আছি। যাইহোক মনে পড়লে আবার লিখবোনে। এটা তো আমারই ব্লগ। এটাকে নিয়ন্ত্রন করবো আমি। ছোট হলেও এই নিয়ন্ত্রনের ক্ষমতাটা যখন পুরোপুরি অনুভুতিতে নিতে পারবো তখন মনে হয় লিখে আরো আনন্দ পাওয়া যাবে।

ফেসবুক বন্ধ- কিছু অসংলগ্ন ভাবনা [খুব বেশী পাকি বিদ্বেষী লেখা, পাকি প্রেমিরা পড়লে ভালো লাগতে পারে]

মনে মনে কিছুটা গর্ব অনুভব করছিলাম এই ভেবে বাংলাদেশ কোন ধর্মান্ধ দেশ না। অনুভবটা মনে গেড়ে বসার আগেই কুঠারাঘাত। ফেসবুক বন্ধ। কেন বন্ধ? নানা মুনির নানা মত গতকাল সবাইকেই ধুম্রজালে আবদ্ধ করে রেখেছিল। এখনো মানুষ জানেনা আসলে কেন ফেসবুক বন্ধ হোল?

যাই হোক ধরে নিচ্ছি আমাদের প্রবল সক্রিয় ধর্মীয় অনুভুতিতে আঘাত করেছে নাকি ফেসবুক। কিভাবে করলো আমি জানিনা। ২০ তারিখে রাসুল [সা:] কে নিয়ে যে কার্টুন আকার প্রতিযোগিতা সম্বলিত যে পেজ বানানো হয়েছিল সেটা ২৪ তারিখেই ফেসবুক কর্তৃপক্ষ সরিয়ে নিয়েছে। আমার প্রবল সেন্সেটিভ ধর্মিয় অনুভুতিতে সেটা আঘাত হানলো তার ৫ দিন পরে। কি বিচিত্র। কি বিচিত্র।

আমাদের আমিনি হুযুর ব্যপারটি টের পেয়েছেন একটু দেরি করে। তার বলিষ্ঠ হুঙ্কারে সরকার নাকে খত দিয়ে ফেসবুক বন্ধ করে দিল এবং বরাবরের মত ডেনিস এম্ব্যাসি বন্ধের হুমকি এবং দাবি !!!!! ।বাংলাদেশে আর কারো ধর্মিয় অনুভুতিতে আঘাত লেগেছে কিনা আমার জানা নেই, ব্লগগুলোতে যারা দিনভর জাত গেল, ধর্ম গেলো বলে চিল্লায় তাদের অনুভুতিতেও দেখলাম আঘাত লাগলোনা। এখন একটা ব্যাপার পরিস্কার বাংলাদেশে ১০ লাখের মত ফেসবুক ইউসারদের সম্মিলিত অনুভুতিও আমিনির একার অনুভুতির থেকে দুর্বল। আমরা ধন্য এমন অনুভুতি সম্পন্ন সম্পদ আমাদের আছে বলে।

বাংলাদেশে কয়টা পত্রিকার সার্কুলেশন সঙ্খ্যা ১০ লাখ? কোন চ্যানেলের দর্শক ১০ লাখ? নামকাওয়াস্তে এসব পেপারপত্রিকা, টিভি বন্ধ হলে আমাদের অনুভুতি শিরশীরিয়ে ওঠে, তার থেকে ১০০ গুন শক্তিশালী এই মাধ্যম টি বন্ধ হওয়ায় আমরা যথারিতী অনুভুতির দরজায় খিল ঠুকে দিয়েছি। আজ কোন বিরোধি দল বলেনা এটি একটি কালো দিন। আজ মানুষের বাক স্বাধীনতা কেড়ে নেবার দিন। অথচ এই ফেসবুককে আমরা ব্যাবহার করেছি জব্বারের একচেটিয়া ব্যাবসার বিরুদ্ধে, যুদ্ধপরাধের বিরুদ্ধে প্রচারনায়, মুমুর্ষ রোগির জন্য রক্ত সংগ্রহে।

তথ্যর অবাধ প্রবাহ যেকোন অন্যায় রুখে দিতে পারে। গতকালের কালেরকন্ঠে দেয়া তথ্য অনুযায়ি বাংলাদেশের টোটাল ফেসবুক ইউসারদের ৫০ ভাগ হচ্ছে ১৮-২৪ বয়সি তরুন। এই বিশাল জনগোষ্ঠিকে যদি তথ্যোর এই প্রবাহ থেকে বিচ্ছিন্ন করা সম্ভব হয় তাহলে আমিনীদের আর চিন্তা থাকেনা। বাংলাদেশকে তালেবানীকরনে তারা আরেকধাপ এগিয়ে যাবে আর কি। এরাই একদিন মিছিল করেছিল ১৯৯৭ সালের দিকে 'বাংলা হবে আফগান'। সেন এর তত্ত্বমতে, তথ্যের প্রবাহই পারে দুর্ভিক্ষের মত মহামারী থেকে রক্ষা করতে। দীর্ঘদিন এই প্রবাহ বন্ধ রাখতে পারলে এক সামাজিক দুর্ভিক্ষ আমাদের নিশ্চিতভাবেই পীড়ন দেবে অদুর অথবা সুদুর ভবিষ্যতে। তথ্যপ্রবাহের এই সুত্রটা কাটা পড়ায় আজ আমিনি, মুজাহিদ গোষ্ঠির মত খুশি মনে হয় আরে কেউ নেই।


এই সুজোগে আমাদের পাকিজাত সারমেয় গুলো পাকিস্তানের http://www.millatfacebook.com এর সাড়ম্বরে প্রচার করে যাচ্ছে।সে সাথে ভিনগ্রহীয় সব যুক্তির অবতারনা:
- ফেসবুকে যুব সমাজ উচ্ছেন্নে যাচ্ছে
- ছেলেপেলে লেখাপড়া করছে না
- লোকজন পরকিয়াতে জড়িয়ে পড়ছে ইত্যাদি ইত্যাদি


আসলে এইসব পড়লে মনে হয় দেশ আগে কোন উচ্চিন্নে যাওয়া ছেলেপেলে, পরকিয়া ইত্যাদি ইত্যাদি ছিলনা। আমি আমিনি গংদের চিনিনা। কেউ কি তাকে http://www.millatfacebook.com সম্পর্কে দয়া করে একটু বলবেন। তাহলে সাম্নের শুক্কুরবারে হয়ত উনি দাবি তুল্বেন সবাই যেন ওইটা ইউজ করে এবং সরকার যেন ওটা ব্যাবহার বাধ্যতামুলক করে।

খুব ছোট্ট পর্যবেক্ষন:

- আমরা সব সময়ই জ্ঞাতসারে হোক অজ্ঞাতসারে হোক পাকিদের অনুসরন করি
- পাকিস্তান টেলেভিষন = বাংলাদেশ টেলিভিষন
- পাকিস্তান রেডিও = বাংলাদেশ রেডিও
- সামরিক শাষনের ঐতিহ্য
- রাজনৈতিক ঐতিয্য [আওমিলীগ, জামাত, মুস্লিম লীগ]
- জাতীয় স্লোগান [জিয়ে পাকিস্তান = জয় বাংলা, পাকিস্তান জিন্দাবাদ = বাংলাদেশ জিন্দাবাদ]
- সেনাবাহিনীর ক্রিকেট বোর্ডের প্রধান হওয়া
- ক্রিকেটে চরম আভ্যন্তরিন কোন্দল এবং অধারাবাহিক পারফরমেন্স
- বাংলাদেশ বিমানের নতুন ডিজাইন=পাকি বিমানের ডিজাইন

এই যখন অবস্থা তখন পাকিস্তান বন্ধ করছে, আমরা কিভাবে চুপ থাকি? জাতিয় ইজ্জত কা সাওয়াল। আমদের ধনুর্ভাঙ্গা পন কুপমুন্ডকতায় আমরা না পাকিরা আগানো সেটা প্রমান করা বিশ্বের সামনে। সফলতা কামনায়।